রওশন জামিল ছিলেন বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান অভিনেত্রী ও নৃত্যশিল্পী।

102

রওশন জামিল (৮ মে ১৯৩১ – ১৪ মে ২০০২) ছিলেন বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান অভিনেত্রী ও নৃত্যশিল্পী। তাঁর কর্মজীবন ও শিল্পচর্চা বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে গভীর প্রভাব ফেলেছে।

🎭 জীবনী ও কর্মজীবন

রওশন জামিল ঢাকার রোকনপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার্স স্কুলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা লাভ করেন এবং পরবর্তীতে ইডেন মহিলা কলেজে অধ্যয়ন করেন। ছোটবেলা থেকেই নৃত্যের প্রতি তাঁর আগ্রহ ছিল। ম্যাট্রিকুলেশন পাস করার পর তিনি ঢাকার ওয়ারির শিল্পকলা ভবনে নৃত্য শিক্ষা গ্রহণ করেন। সেখানে তাঁর পরিচয় হয় নৃত্যশিল্পী গওহর জামিলের সঙ্গে, যাঁর সঙ্গে তিনি ১৯৫২ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এই দম্পতি ১৯৫৯ সালে ‘জাগো আর্ট সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা করেন, যা বাংলাদেশের নৃত্যচর্চার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত।

রওশন জামিলের অভিনয় জীবন শুরু হয় ১৯৬৫ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনের নাটক ‘রক্ত দিয়ে লেখা’র মাধ্যমে। এরপর তিনি ‘ঢাকায় থাকি’ ও ‘সকাল সন্ধ্যা’সহ আরও অনেক টিভি নাটকে অভিনয় করেন। ১৯৬৭ সালে ‘আলী বাবা চল্লিশ চোর’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তিনি বড় পর্দায় আত্মপ্রকাশ করেন। তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘জীবন থেকে নেয়া’ (১৯৭০), ‘নয়নমনি’ (১৯৭৬), ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’ (১৯৭৯), ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ (১৯৭৮), ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ (১৯৮৯), ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ (১৯৯৯) এবং ‘লালসালু’ (২০০১)।

🏆 পুরস্কার ও সম্মাননা

রওশন জামিল তাঁর অসাধারণ অভিনয় ও নৃত্যশিল্পের জন্য বহু পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন। তিনি ১৯৯৫ সালে নৃত্যকলায় একুশে পদক লাভ করেন। এছাড়াও তিনি ‘নয়নমনি’ (১৯৭৬) ও ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’ (১৯৭৯) চলচ্চিত্রে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। তিনি বাচসাস চলচ্চিত্র পুরস্কার, তারকালোক পুরস্কার এবং টেনাশিনাস পদকসহ আরও অনেক সম্মাননা লাভ করেন।

👪 ব্যক্তিগত জীবন ও মৃত্যু

রওশন জামিল ও গওহর জামিলের সংসারে ২ ছেলে ও ৩ মেয়ে রয়েছে। ১৯৮০ সালে গওহর জামিলের মৃত্যুর পর রওশন জামিল একাই ‘জাগো আর্ট সেন্টার’ পরিচালনা করেন। ২০০২ সালের ১৪ মে তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থার (এফডিসি) প্রবেশদ্বারে ‘নয়ন সম্মুখে তুমি নাই’ শিরোনামের ফলকে প্রয়াত চলচ্চিত্রকারদের সঙ্গে তাঁর নাম খোদাই করা হয়েছে।

🎬 উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রসমূহ

আলী বাবা চল্লিশ চোর (১৯৬৭)

জীবন থেকে নেয়া (১৯৭০)

নয়নমনি (১৯৭৬)

সূর্য দীঘল বাড়ী (১৯৭৯)

গোলাপী এখন ট্রেনে (১৯৭৮)

বেদের মেয়ে জোসনা (১৯৮৯)

শ্রাবণ মেঘের দিন (১৯৯৯)

লালসালু (২০০১)

রওশন জামিলের জীবন ও কর্ম বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ইতিহাসে একটি উজ্জ্বল অধ্যায়। তাঁর অবদান ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।

     More News Of This Category

Like page