বিচার ব্যবস্থার উন্নয়নে পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ-এর ঐতিহাসিক অবদান

29

🏛️ বিচার ব্যবস্থার উন্নয়নে পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ-এর ঐতিহাসিক অবদান

বাংলাদেশের ইতিহাসে পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ছিলেন এমন একজন রাষ্ট্রনায়ক, যিনি দেশের ন্যায়বিচার ও বিচারপ্রাপ্তির অধিকারকে শুধু শহরের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ না রেখে প্রতিটি গ্রামের দরজায় পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন। বিচারব্যবস্থাকে তিনি দেখেছিলেন একটি মানবিক সেবাখাত হিসেবে—যার মূল লক্ষ্য হলো, সাধারণ মানুষ যেন সহজে, দ্রুত ও সুলভে ন্যায়বিচার পায়।

বিচার ব্যবস্থা সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে রংপুর, যশোর, কুমিল্লা, বরিশাল, সিলেট এবং চট্টগ্রামে ৬টি হাই কোর্টের বেঞ্চ সম্প্রসারণ করেন। বিচার ব্যবস্থা দ্রুত করতে ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি দণ্ডবিধি এবং ১৯০৮ সালের দেওয়ানী কার্যবিধি সংশোধন করেন। একই উদ্দেশ্যে প্রতিটি উপজেলায় মুন্সেফ কোর্ট স্থাপন করেন। যৌতুক নিরোধ আইন, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ আইন, মুসলিম পারিবারিক আইন, বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন জারি করেন। মামলার জট কমাতে উদ্যোগ নিয়েছিলেন পল্লীবন্ধু।

🌿 ১. গ্রাম আদালত: ন্যায়বিচার পৌঁছে গেল জনপদে

এরশাদ সরকারের অন্যতম গৌরবময় উদ্যোগ ছিল “গ্রাম আদালত আইন, ১৯৮৫”। এই আইনের মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদভিত্তিক ক্ষুদ্র মামলা নিষ্পত্তির সুযোগ সৃষ্টি হয়, যার ফলে কৃষক-জেলে-শ্রমিকদের আর থানা বা জেলা শহরে ছুটতে হয়নি। এটি ছিল “বিচার মানুষের দোরগোড়ায়” পৌঁছে দেওয়ার বাস্তব উদাহরণ।

⚖️ ২. বিচার ব্যবস্থায় গতি আনতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল

বিচারপ্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতা কমাতে এরশাদ প্রশাসন চালু করে কিছু দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল, যেখানে নির্দিষ্ট বিষয়ের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এতে করে বিচারপ্রার্থী জনগণের মধ্যে আস্থা বাড়ে।

📜 ৩. আইন সংস্কার ও যুগোপযোগী নতুন আইন প্রণয়ন

পল্লীবন্ধুর শাসনামলে বেশ কিছু আইন সংস্কার হয় এবং নতুন আইন প্রণয়ন হয়, যা সমাজের চাহিদা অনুযায়ী ছিল।
বিশেষভাবে নারী ও শিশুর সুরক্ষা, জমি সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি, দুর্নীতি দমন—এসব খাতে সাহসী ও প্রয়োজনীয় আইন প্রণীত হয়।

🕌 ৪. রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম: বিচার ব্যবস্থায় নৈতিকতার ভিত্তি।

১৯৮৮ সালে সংবিধানের ৮ম সংশোধনের মাধ্যমে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করা হয়।
এরশাদ বিশ্বাস করতেন, ধর্মীয় মূল্যবোধ বিচার ব্যবস্থার নৈতিক ভিত্তি শক্তিশালী করে। এর ফলে বিচার প্রক্রিয়ায় ন্যায়, সদাচার ও মানবিকতা আরও গুরুত্ব পায়।

🏛️ ৫. আদালত অবকাঠামো ও বিচারক আবাসন উন্নয়ন।

বিচারক ও আদালতের কর্মপরিবেশ উন্নয়নে নতুন নতুন আদালত ভবন নির্মাণ ও আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। গ্রাম-উপজেলাতেও ন্যায়বিচারের স্থায়ী কাঠামো গড়ে তোলা হয়।

👨‍⚖️ ৬. আইনজীবী প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বৃদ্ধি।

এরশাদ প্রশাসন আইনজীবীদের প্রশিক্ষণ ও পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন কর্মসূচি চালু করে।
আইনের ছাত্র, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের মধ্যে আইনি সচেতনতা বাড়াতে কাজ করা হয়।

🕊️ ৭. মানবাধিকার রক্ষায় ইতিবাচক পদক্ষেপ।

এরশাদ সরকার মানবাধিকার নিয়ে জনসচেতনতা গড়ে তোলে। প্রথমবারের মতো মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কাজের সুযোগ তৈরি হয়, বিচার বিভাগের সঙ্গে তাদের সহযোগিতার ক্ষেত্র বাড়ে।

🏁 উপসংহার:

পল্লীবন্ধু এরশাদ শুধু একজন সেনাপতি বা রাজনীতিবিদ ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন বিচক্ষণ সমাজ সংস্কারক।
তার সময়েই বিচার ব্যবস্থায় প্রথম “গ্রামীণ ন্যায়বিচার”, “দ্রুত বিচার”, এবং “মানবিক বিচার”—এই ধারণাগুলো বাস্তব রূপ পায়।
আজও তার নেওয়া পদক্ষেপগুলো বিচার ব্যবস্থার ভিত শক্ত করে রেখেছে।

এই অবদানগুলোই প্রমাণ করে—ন্যায়বিচার শুধু আদালতের চৌহদ্দিতে নয়, পল্লীর মাটিতেও এরশাদ নামের একজন রাষ্ট্রনায়ক তা পৌঁছে দিয়েছিলেন।

#বিচার #ব্যাবস্থা #উন্নয়ন #পল্লীবন্ধু #এরশাদ #জাতীয়পার্টি

     More News Of This Category

Like page