বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসে অন্যতম শক্তিমান ও জনপ্রিয় খল অভিনেতা ওয়াসীমুল বারী রাজীব, যিনি রাজীব নামেই সমধিক পরিচিত, তার জীবন ও কর্ম নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন নিচে উপস্থাপন করা হলো।
—
🎬 জীবনের শুরু ও চলচ্চিত্রে আগমন
রাজীব ১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারি পটুয়াখালী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। চলচ্চিত্রে আসার আগে তিনি তিতাস গ্যাস কোম্পানিতে চাকরি করতেন। ১৯৮১ সালে ‘রাখে আল্লাহ মারে কে’ সিনেমার মাধ্যমে রুপালি পর্দায় অভিষেক হয় তার। পরবর্তীতে কাজী হায়াতের ‘খোকন সোনা’ সিনেমার মাধ্যমে তারকাখ্যাতি অর্জন করেন ।
—
🎭 অভিনয় জীবন ও সাফল্য
প্রায় দুই শতাধিক বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন রাজীব। প্রথমদিকে নায়ক চরিত্রে অভিনয় করলেও খলনায়ক হিসেবে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে: ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’, ‘ভাত দে’, ‘দাঙ্গা’, ‘সত্যের মৃত্যু নেই’, ‘স্বপ্নের পৃথিবী’, ‘বিক্ষোভ’, ‘দেনমোহর’, ‘অনন্ত ভালোবাসা’ প্রভৃতি ।
—
🏆 পুরস্কার ও সম্মাননা
রাজীব চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেছেন শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব-অভিনেতা হিসেবে। পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রগুলো হলো: ‘হীরামতি’ (১৯৮৮), ‘দাঙ্গা’ (১৯৯১), ‘বিদ্রোহ চারিদিকে’ (২০০০) ও ‘সাহসী মানুষ চাই’ (২০০৩) ।
—
👨👩👧👦 ব্যক্তিগত জীবন
রাজীব দুইবার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। প্রথম স্ত্রী কুলসুমের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর তিনি ইসমত আরাকে বিয়ে করেন। এই দম্পতির পাঁচ সন্তান রয়েছে: তিন ছেলে ও দুই মেয়ে। প্রথম দুই জমজ ছেলে, জয় ও বিজয়, ১৯৯৬ সালে নৌকা ডুবিতে মৃত্যুবরণ করেন ।
—
🕯️ মৃত্যু ও স্মরণ
২০০৪ সালের ১৪ নভেম্বর ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৫২ বছর বয়সে রাজীব মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর আগে তিনি দর্শক ও সহকর্মীদের কাছে ক্ষমা চেয়ে চোখ মুছতে মুছতে বলেন, “আমি যদি কারও মনে কষ্ট দিয়ে থাকি, আমাকে ক্ষমা করবেন” ।
—
🎞️ উত্তরাধিকার
রাজীবের অভিনয় দক্ষতা ও খল চরিত্রে তার অনবদ্য উপস্থিতি তাকে বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অমর করে রেখেছে। তার সংলাপ ও অভিনয় আজও দর্শকদের মনে গেঁথে আছে। তিনি ছিলেন একজন কিংবদন্তি অভিনেতা, যিনি খলনায়ক চরিত্রকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।